অমিমাংসিত কথোপকথন

আমার আর মৌনতার ভালোবাসার সম্পর্ক বেশ কয়েক বছরের আমাদের মান অভিমান শেষই হয় না গতকাল ফেসবুকে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে মান-অভিমানের পালা শুরু হলো শেষ কথোপকথন ছিলো এরকম-----

 

মৌনতা: রুদ্র, খুব বেশি ব্যস্ত? বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত

 

আমি: তুমি ভালো থেকো আর মান-অভিমান করতে চাই না তুমি তোমার একরোখা জিদ নিয়েই থাকো

 

মৌনতা: আমার জিদ ! আমি জিদ দেখাই?

আমি: আসলে বুড়ো বয়সে আর অভিমান করেই বা কি ! কি হবে এসব করে ! লাভ-ক্ষতির হিসাব নয় কিন্তু তুমিই বলো ! আসলেই দরকারটা কি? তাছাড়া এটা আমার ব্যক্তিত্বের সাথে একেবারেই যায় না

মৌনতা: অজুহাত দেখানোর প্রয়োজন ছিল না বললেই হতো- আমাকে ছেড়ে দাও বলতে-তুমিহীন একা বেশ ভালো আছি আর কাউকে আমার জীবনে দরকার হবে না দেখতে-আমি তোমাকে আর জ্বালাই কি না ! অাজ এই মুহূর্ত থেকে আর কোনোদিন তোমার সাথে যোগাযোগ করবো না আমার মৃত্যুর খবরও তোমাকে জানাবো না হৃদয়ের অনেক বড় একটা আসনে বসিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকে আমার পারিপার্শ্বিক সবকিছুর মাঝখানে তোমাকেও একটা অংশ ভাবা শুরু করেছিলাম কত বোকা আমি; তাই না? আমি ভাবতাম- এমন একজন মানুষ আছে যে আমাকে না দেখে, না জেনে মায়ায় জড়িয়েছে, আমার কত আপন হয়ে গেছে! কল্পনার একটা জগত বানিয়ে ফেলেছিলাম মনে মনে, একা একা বিচরণ করতাম সেখানে কথা বলতাম তার সাথে কতটা নির্বোধ হলে এসব করে মানুষ! আর পারছি না মোবাইলের স্ক্রিণ ঝাপসা দেখছি তুমি ভালো থেকো খুব ভালো...

 আমি: এখন তোমার সেই জায়গা নড়বড়ে করে দিয়েছি?বাহ !বাহ !হুম, তুমি নির্বোধ, আসলেইআমার মতো একটা ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলে যে তোমার সুখের পাখীরে গলা টিপে হত্যা করেছে যে তোমার পথে কাঁটা দিয়েছে যে তোমার আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছে

মৌনতা: তুমি আমার অনুভূতিটা ধরতেই পারো নিঅথবা আমি বোঝাতে পারি নি সঠিক ভাবে....

আমি: দেখো; সেটা আমার ব্যর্থতাআমাকে ক্ষমা করবেআমি হয়তো তোমাকে আঘাত দিয়েছিতুমি যে আসনে আমাকে বসিয়েছিলে সেটা তো সরিয়েই ফেলেছো; কথায় খুশি? ভালো থাকবেআর কোনোদিন কোনো অধিকার নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো না তোমার মনের আশা পূরণ হোক

মৌনতা: অধিকার, ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মানবোধ শব্দগুলো কি তোমার ঝুলিতেই থাকবে? শুধুই তোমার দখলে থাকবে? তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে?

আমি: সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে চলে যাচ্ছি স্বনির্বাসনে আর কোনো উপায় নেই এখন বুঝছি; কতটা তুচ্ছ ছিলাম তোমার জীবনে

মৌনতা: শেষ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও আর জ্বালাবো না, আর ডাকবো না কখনও

আমি: প্রশ্নটা আমার জন্য বেশ খানিকটা অপমানের যদি নাই বোঝো ভালোবাসতাম কি না, তাহলে ধরে নাও-ভালোবাসতেই পারি নি যদি আমার গভীরতা নাই বোঝো; তাহলে ধরেই নাও-সেটা ভালোবাসা ছিলো না সত্যিই তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম

মৌনতা: ভালোবাসতাম!

আমি: কিছু সময় আগে পর্যন্ত ভালোবাসতাম; এখন আর বাসি না ভালোবাসা আসলে আমার জন্য না যে কষ্টকে কিছুদিন আগেও আপন করে নিয়েছিলাম, এখনও আবার সেই কষ্টগুলোর সাথেই থাকবো কষ্টরা কখনই ফাঁকি দেয় না সুখগুলো ক্ষণিকের অতিথির মতো আসে আবার চলে যায়

 মৌনতা: কিন্তু আমি যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে ছেড়ে আমি যে একা থাকতে পারবো না ! আমার যে কষ্ট হবে ! আমার বুকের মধ্যে যে অক্সিজেনশূণ্য হবে ! আমাকে কি হত্যা করতে চাও?

আমি: দেখো, আবেগ নিয়ে তুমি সারাজীবন চলতে পারবে না তোমার মূল্যবান সময়কে সঠিক জায়গায় নষ্ট করো, নইলে পস্তাবে

মৌনতা: আমি আর নিতে পারছি না

আমি: আর কোনোদিনই হয়তো ফিরবো না আমাকে পারলে ক্ষমা করবে তুমি বিচক্ষণ, মেধাবিনী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী সামান্য একজনের জন্য কাঁদবে না, সেটা জানি জীবন জীবনের নিয়মে চলবে

মৌনতা: একটা কথা বলেই তবে যাই আমি বুঝতে পারছি যে; তুমি আমাকে তোমার জীবনের অতি সামান্য, তুচ্ছ কিছুও মনে করো না গা ঝাড়া দিলেই সব শেষ কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তুমি তা নও আমার মতে ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না