হাওড়া ব্রীজ, কলকাতা
হাওড়া ব্রীজ, কলকাতা। ট্যাক্সিটা হঠাৎ থেমে গেলো মাঝ ব্রীজ এ। সামনের জীপটা হঠাৎ ব্রেক করেছে। আচমকা ধাক্কা খেলাম। আমার ট্যাক্সি ড্রাইভার নেমে ধমক দেবার জন্য গাড়ি থেকে নেমে গেলো। আমিও সাথে সাথে নেমে যাই। নেমে যাবার পর চমকে উঠি। কিছুদিন আগে স্বপ্নে যে মেয়েটাকে নিয়ে তাজমহলে ঘুরে বেড়িয়েছি, ঠিক সেই মেয়েটিই সামনের গাড়িতে বসা। আশ্চর্য ! এটা কিভাবে সম্ভব ! ক্ষণিকের জন্য মনে হলো বঙ্গদেশ থেকে একটি স্বপ্নকে সত্যি করতেই বোধহয় হাওড়া ব্রীজের ঠিক মাঝখানে মোটরে মোটরে ধাক্কা খেলো রবী ঠাকুরের শেষের কবিতার মতো।
কিছুটা সামলে নিয়ে বিনয়ের সুরে বললাম-
ক্ষমা করবেন, “আপনার ড্রাইভারকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলবেন। তা না হলে সমূহ বিপদের আশংকা থেকে যায়। আমি চাই না, এরকম রূপসী মেয়েরা অকালেই প্রাণ হারাক।”
তৎক্ষনাৎ মেয়েটা বললো-“মরলেই তো বেঁচে যাই। আমি তো বেঁচেই আছি মৃতের মতো।”
এই কথা শোনার পরে কিছুটা অধিকারের সুরে আমার আইডি কার্ড শো করে বললাম তাকে-“আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি একটা তদন্তের কাজে। আপত্তি না থাকলে আমি আপনার গন্তব্যে পৌছে দিতে পারি। আজ আমি একেবারেই ফ্রি ! কাল থেকে আমার কাজ শুরু হবে।”
এই কথা শোনার পরেই গাড়ি থেকে নেমে আসলো মেঘা। এর মধ্যে নিজেরা পরিচিত হয়ে নিয়েছি।
মেঘা গাড়িতে চেপে বসেই বললেন, “আচ্ছা মি: আব্রাহাম, আপনার শার্লক হোমস হবার ইচ্ছাটা কবে থেকে শুরু হয়েছিলো? আমি তো মাঝে মাঝেই ভাবি, আমার বাবা-মা এবং ছোটো ভাই এর হত্যাকারীকে আমি নিজেই খুঁজে বের করবো।”
এই কথা শোনার পর আমি চুপসে গিয়েছিলাম। কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থা হয়েছিলো। মানুষ কতোটা নৃশংস হলে একটা পরিবারকে পুরো ধ্বংস করে দিতে পারে ! একটা বংশের প্রদীপ মুছে ফেলতে পারে ! যদিও বিভিন্ন মামলা তদন্ত করতে করতে আমার বেশ খানিকটা সয়ে গেছে। এখন এতোটুকু বুঝতে পারি-সামান্য কথা কাটাকাটির জেরেও মানুষ মানুষের বুকে ছুরি মেরে হত্যা করতে পারে, স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে ঘুমের মধ্যে গলাটিপে হত্যা করতে পারে, অবুঝ শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে চলে এসেছি মেঘার পার্ক-স্ট্রীটের বাসায়। আমি সেদিন মেঘার ফোন নম্বর নিয়ে দমদমের হোটেলে ফিরে এসেছি। দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি। আবারও স্বপ্নে মেঘাকে দেখলাম। যখন মেঘার সাথে পরিচয় ছিলো না তখনও মেঘাকে স্বপ্নে দেখেছি। এটা যদি কোনো ডাক্তারের কাছে বলা যায়, তাহলে হয়তো আমাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো শাখা-প্রশাখা এনে বুঝিয়ে দেবে, সেটা জানি। তবে পৃথিবীতে কিছু রহস্য যে কখনও উন্মোচন হয় না সেটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। মেঘার বিষয়ও তাই। মেঘাকেও এটা নিয়ে বলতে পারছি না। এটা বললে সে আমার দুর্বলতা বুঝবে। হয়তো সে আমার মধ্যে হেলুসিনেশন বিষয়টিকে টেনে আনবে। কয়েকটি দেশের বড় বড় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছি কিন্তু নিজের এই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে থমকে আছি একটি বিন্দুতে। এই বিন্দু থেকে বের হতে পারছি না। কোনো বিজ্ঞান দিয়ে এই বিন্দু থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। মেঘার পারিবারিক বিষয়টি ভাবতে ভাবতে ফোনে কল চলে আসলো।
মেঘা: হ্যালো মি: আব্রাহাম; কফি হাউজে আসবেন সন্ধ্যার পর? (যদি আপত্তি না থাকে)
আমি: ঠিক সন্ধ্যা ৭ টায় হাজির হবো।
তদন্তের কাজে আমাকে দেওয়া গাড়িটা হোটেলে রেখেই দমদম স্টেশনে চলে গেলাম জুনিয়ার অফিসার দেবপ্রসাদকে নিয়ে। সঙ্গত কারণে গাড়ি নেই নি। মেট্রোরেলে চেপে মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশনে নেমে গেলাম। এই স্টেশন থেকে ৫ মিনিটের পথ হেঁটে কলেজ রোড দিয়ে পৌছে গেলাম প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট এর বিপরীত প্বার্শে অবস্থিত মান্না দে এর স্মৃতি বিজড়িত বিখ্যাত কফি হাউজে।
(চলবে........)