বিছানাসঙ্গী
১৭ বছর পর তৃণার সাথে আজ দেখা হয়েছে পল্টন মোড়ে। একটা টং দোকানে দু’জনে চা খেয়েছি। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিলো তৃণার। একসাথেই প্রাইমারিতে পড়েছি। বেশ মিষ্টি এবং দুষ্টু মেয়ে ছিলো। সবাইকে চিমটি দেওয়া অভ্যাস ছিলো। এজন্য স্যারদের হাতে বেশ বকা খেতো। একবার সেকেন্ড স্যার তো ওর পশ্চাৎদেশে বেত্রাঘাতও করেছিলো।
পরে ওরে দেখলেই বলতাম- “তোমার পিছনটা কি ফুলে আছে এখনও?” হা হা হা....
চা খেতে খেতে মনের অজান্তেই সেইসব স্মৃতিগুলো ভেসে আসে মনে। হেসে ফেলি। ২০০১ এ বিয়ে হয়েছিলো। তখন এসএসসি দিয়েছি। ওর পরীক্ষার আগেই বিয়ে হওয়াতে আর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে নি। ২০০৩ এ একটা মেয়ে হয়। ওর নাম অপ্সরা। ২০০৩ এ তৃণার ডিভোর্স হয়ে যায়। অপ্সরা এবার এস এসসি পরীক্ষার্থী। গত ১৫ বছরে অপ্সরার বাবা মেয়ের খোঁজ নেয় নি। এমনকি সে কোথায় আছে তাও জানে না। পৃথিবীতে এমন বাবা আছে ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কোন সময় চা শেষ করেছি তাও জানি না। একসময় তৃণাকে জিজ্ঞাসা করি–
আমি: আচ্ছা, তুমি আর বিয়ে করো নি কেনো?
তৃণা: অনেকেই সঙ্গ চায় কিন্তু সঙ্গী হতে চায় নি কেউ। যে সব কিছু মেনে নিয়ে আমাদেরকে আঁকড়ে ধরে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারে। বিশ্বাস করো, অনেকেই চেয়েছে আমাকে। বিছানাসঙ্গী হতে চেয়েছে বহু ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং নাম করা ব্যবসায়ী। তাদের প্রত্যেকের পেছনে একটি স্বার্থই ছিলো। শুধু আমার শরীর নিয়ে তারা খেলতে চেয়েছে। কেউ একবারও বলে নি-“তোমাকে সারাজীবনের জন্য গ্রহণ করতে চাই”। একসময় মনে হয়েছে, পৃথিবীটা বোধহয় এমনই। এটাই হয়তো নিয়ম।
তৃণার মতো এতো সুন্দরী নারী আমি জগতে কমই দেখেছি। তাকে প্রথম দর্শনে কেউ দেখে ভাবতে পারবে না যে ওর অপ্সরার মতো একটি বড় মেয়ে আছে। তৃণা আমার খবর জানতে চাইলো।
আমি তৃণাকে বললাম, “তোমার বাসায় চিংড়ি আর টাকি ভর্তা খেতে কবে আসবো?
তৃণা বললো-“এড়িয়ে গেলে না কি?”
আমি: জীবন কি ঠুনকো? জীবনকে সত্যিই কি এড়িয়ে যাওয়া যায়?
দু’জনে দুদিকে চলে গেলাম। হয়তো আবারও পথের বাঁকে ওর সাথে দেখা হবে। সেদিনও আরেকটি গল্প তৈরী হবে। জীবন এর প্রতিটি ঘন্টাই এক একটা গল্প। যে গল্প লিখে শেষ করা যায় না…….